সমতল ডেকের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে বিমানগুলো কিভাবে টেকঅফ করে? ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?
Catapult-assisted take-off barrier arrested-recovery বা CATOBAR শ্রেণীর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলোর ফ্লাইট ডেক আকারে তুলনামুলক বড় হয়। এধরনের ক্যারিয়ারে বিশেষ পদ্ধতিতে এয়ারক্রাফটকে অল্পসময়ে প্রচণ্ড গতি লাভ করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ফলে যুদ্ধবিমানগুলো তার সম্পূর্ণ সক্ষ্মতার অস্ত্র ও ফুয়েল নিয়ে টেকঅফ করতে পারে। এধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো
নিউক্লিয়ার শক্তিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এই শ্রেণীর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লিট ক্যারিয়ারের সবগুলোই এই শ্রেণীর। এখানে 'ক্যাটাপুল্ট' খুবই জটিল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।
যেকোনো জাহাজের সামনের অংশকে 'বো', পিছনের অংশকে 'স্টার্ন' বলে। ডান ও বামের অংশকে যথাক্রমে স্টারবোর্ড সাইড ও পোর্ট সাইড বলে। মার্কিন ক্যারিয়ারগুলোর বো তে দুটি ও পোর্ট সাইডে দুটি ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম থাকে। ফলে এগুলো একসাথে দুটি এয়ারক্রাফটসহ ৪০ সেকেন্ড বিরতিতে ৪টি এয়ারক্রাফট লঞ্চ করতে পারে। ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন একই সাথে দুটো এয়ারক্রাফট লঞ্চ করা যায় এবং একটি এয়ারক্রাফট যেন ল্যান্ড করতে পারে। ল্যান্ডিং রানওয়ে স্টার্ন থেকে শুরু হয়ে পোর্টসাইড ও বো এড় কোনাকুনি বরাবর অবস্থিত।
প্রতিটি ক্যাটাপুল্টে একটি করে রেইল ট্র্যাক ও শাটল থাকে। শাটলের মধ্যে বিমানের সামনের চাকা বা নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার এমনভাবে আটকানো থাকে যাতে এটি
ইঞ্জিন চালু থাকা সত্ত্বেও সামনে ও যেতে পারে না, পিছনেও আসতে পারে না। এরপর বিমানের ইঞ্জিনের পিছনে 'জেট ব্লাস্ট ডিফ্লেকটর' নামে একটি শিল্ড যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাঁড় করানো হয়। ফলে জেট ইঞ্জিনের শক্তিশালী থ্রাস্ট পিছনে থাকা অন্যান্য বিমান বা মানুষের ক্ষতি করতে পারেনা। ততক্ষণে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের নিচে থাকা একটি একুমুলেটর ট্যাংকে পানি উত্তপ্ত করে তৈরি করা বাস্প হাই প্রেশারে (প্রায় ৪৬৫ পিএসআই চাপে) জমা রাখা হয়। এবার পাইলটের সিগন্যাল পেলে গ্রাউন্ডসম্যান/ফ্লাইট ডেক ক্রুরা ক্যাটাপুল্ট কন্ট্রোল অফিসারকে নির্দেশ দেন। তিনি শাটল লঞ্চ করতেই ঐ রেইল ট্র্যাকের নিচে থাকা হাইড্রোলিক পিস্টনটি বাস্পের চাপে প্রচণ্ড গতি লাভ করে। এই গতি আসলে কত সেটি এয়ারক্রাফট এর ভরের উপর নির্ভর করে। মূলত এসব বাস্পের কারণেই টেকঅফ করার সময় আপনারা সাদা ধোঁয়া দেখতে পান।
আপনাকে বিস্মিত করতে জাস্ট ছোট্ট একটি তথ্য জানাবো, ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের
মাধ্যমে একটি ২০ টন ভরের বিমান ০ থেকে ২৬৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা গতি লাভ করে মাত্র ২ সেকেন্ডে! এসময় একজন পাইলট মধ্যাকর্ষণের ৪গুন চাপ অনুভব যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির রোলার কোস্টার থেকে দ্বিগুণ। অবশ্য পাইলটদের জন্য এটি আহামরি কিছু নয়, কেননা যুদ্ধবিমান নিয়ে টার্ন নেয়ার সময় ৯জি লোড পর্যন্ত তারা সহ্য করতে পারেন। এভাবে ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের মাধ্যমে একটি বিমান
সহজেই তার টেকঅফ করার মত প্রয়োজনীয় গতি ছোট্ট রানওয়ে থেকে আদায় করতে পারে।
আশা করি ব্যাপারটি আপনাদের কাছে সহজে ব্যাখা করতে পেরেছি। সামরিক বিষয়ক কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেম কিভাবে কাজ করে সেগুলো সম্পর্কে পোস্ট চাইলে আমাদের জানাতে পারেন। এডমিনগণ আপনাদের জ্ঞান পিপাসা মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন ইনশাল্লাহ।
নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে- Click here